Wednesday, April 4, 2012

তৎকালীন ৩৭ হাজার জনের মধ্যে মুজাহিদের নাম নেই



প্রতিদিন ২৪ ডেস্ক
Special Topএকাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের বাবা মরহুম মাওলানা আবদুল আলী ছিলেন ফরিদপুরের শান্তি কমিটির সদস্য। পিতা যদি কোনো অপকর্ম করে থাকেনতবে তার
দায়ভার পুত্রের (মুজাহিদের) ওপর বর্তাতে পারে না
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আটক জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিপক্ষে আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে গিয়ে এ কথা বলেছেন মুজাহিদের আইনজীবী ব্যারিস্টার মুন্সি আহসান কবির 
সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আসামিপক্ষে শুনানিকালে ও পরে সাংবাদিকদের কাছে মুন্সি আহসান কবির বলেন, ‘মাওলানা আবদুল আলী শান্তি কমিটির সদস্য হয়েও এলাকার মানুষকে রক্ষা করেন। তিনি হিন্দুদের জানমাল ও গয়নাগাটিসহ সম্পদ রক্ষা করেন
তিনি আরো বলেন, `মাওলানা আবদুল আলী ৩৬ বছর ধরে ফরিদপুরে ঈদের নামাজে ইমামতি করেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের অনুরোধেই মাওলানা আবদুল আলীকে কোলাবরেটর আইনের বিচার থেকে মুক্তি দেন`ব্যারিস্টার মুন্সি আহসান কবির আরো বলেন, `একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে জামায়াত নেতারা ভারতীয় আগ্রাসন প্রতিরোধের ইচ্ছা এবং পৃথিবীর বৃহত্তম মুসলিম সমাজের প্রতি আগ্রহ থেকেই নিরবতা করেছিলেন`
সে সময়কার দৈনিক সংগ্রামে ছাপা হওয়া নানা বক্তব্য-বিবৃতির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি আরো দাবি করেন, `সে সময় সামরিক জান্তা ও পাকিস্তান সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে মুজাহিদসহ অন্য নেতারা যা বলতেন তা ছাপা হতো না। যা বলতেন নাতা ছাপা হতো। `এ প্রসঙ্গে প্রসিকিউশনের দাখিল করা অভিযোগপত্রে মুজাহিদ  ’৭১ এর ১৭ অক্টোবর রংপুরে বক্তব্য দিতে গিয়ে দুষ্কৃতকারীদের হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে এই আইনজীবী বলেন, `মুজাহিদ কখনোই রংপুরে যাননি। গিয়ে বক্তব্য দিলেও দুষ্কৃতকারী বলতে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের বোঝান নি`     
অভিযোগ গঠনের বিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে মুজাহিদ সম্পর্কে মুন্সি আহসান কবির বলেন, `একাত্তরের সেপ্টেম্বর মাসে মুজাহিদ সাহেব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সে সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষককে ছাড়া কাউকে চিনতেন না। যুদ্ধ শুরু হয় মার্চেআর তিনি ঢাকায়ই আসেন সেপ্টেম্বরে। মাত্র দুতিন মাসে তিনি মানবতাবিরোধী এতো অপরাধ করলেন কি করে?` তিনি আরো বলেন, `প্রসিকিউশন তাকে বদর বাহিনীর মূল সংগঠক বলেছে। অথচ পাকিস্তানি বাহিনীর অক্সিলারি (সহায়ক) এসব বাহিনী গঠন সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিলো না তার`

`
রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ করেছেমুজাহিদ সাহেব মুক্তিযুদ্ধকালে জিপে চড়ে অপরাধ করে বেড়াতেন। কিন্তু তিনি মন্ত্রী হবার আগে জিপ গাড়িতেই চড়েন নি। ফরিদপুরে যে জেনোসাইড (গণহত্যা) হয়সে সম্পর্কেও তিনি এবং তার বাবা কিছু জানতেন নাবলেও দাবি করেন মুন্সি আহসান কবির  তিনি দাবি করেন১৯৭২ সালে প্রকাশিত ২৯৯ রাজাকারের তালিকা বা কোলাবরেটর আইনে বিচার শুরু হওয়া ৩৭ হাজার জনের মধ্যে মুজাহিদ সাহেবের নাম নেই। এ পর্যন্ত ফরিদপুরের মুক্তিযুদ্ধের ওপর ৫টি বই প্রকাশিত হয়েছে। সে সব বইয়ের কোথায়ও লেখা নেইমুজাহিদ মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছেন বা যুদ্ধাপরাধ করেছেন 
তিনি বলেনএকাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ করে থাকলে তো মুজাহিদ স্বাধীনতার পরে পালিয়ে যেতেন। কই তিনি তো পালিয়ে যাননি। বরং ঢাকায় থেকে তিনি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন। গত ৪০ বছরেও কোনো ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারও তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেনি
মুন্সি আহসান কবির আরো দাবি করেন, ‘‘১৯৮৩ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মুজাহিদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। মুজাহিদ ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রক্রিয়ার সমন্বয়ক। কই শেখ হাসিনাও তো কখনো বলেননি যে, ‘মুজাহিদ সাহেব আপনি রাজাকার ছিলেন?’’ 
তিনি অভিযোগ করেনআওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে জামায়াত নির্মূলের এজেন্ডা ছিল বলেই নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা করা হচ্ছে। মুজাহিদ জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচিত হয়েছেন বলেই তাকে রাজাকার-আলবদর বলা হচ্ছেতার বিচার করা হচ্ছে 
ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গঠনের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য ১১ এপ্রিল তারিখ নির্ধারণ করেছেন

No comments:

Post a Comment