প্রতিদিন ২৪ ডেস্ক
এফিডেভিটের একটি অনুলিপি পেয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। রোববার এ খবর দিয়েছে পাকিস্তানের ‘দি নিউজ’। খবরে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারের হাতে এ দলিলটির একটি অনুলিপি পৌঁছানোর পর এখানকার একজন বিশ্লেষক দি নিউজকে দেয়া মন্তব্যে বলেছেন যে দুররানির বক্তব্যে বাংলাদেশ বা বিএনপির কোনো প্রসঙ্গ না থাকায় সরকার এ প্রসঙ্গে নিরব হয়ে গেছে।
পাকিস্তানে ‘মেহরানগেট কেলেংকারি’ নামে পরিচিত একটি মামলায় ইন্টেলিজেন্স সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স বা আইএসআই’র প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল অব. আসাদ দুররানি সম্প্রতি দেশটির সুপ্রিমকোর্টে হাজির হয়ে এফিডেভিট আকারে বক্তব্য দেন।
পরে একজন ভারতীয় সাংবাদিক এ এফিডেভিটের বরাত দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দৈনিক খালিজ টাইমসে প্রতিবেদন করেন যে, আইএসআই’র সাবেক প্রধান বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে (বিএনপি) ৯১’র নির্বাচনে তহবিল যোগান দিয়েছে। এ খবরটি বাংলাদেশে একটি প্রধানতম জাতীয় দৈনিক প্রকাশ করলে বিএনপির বিরুদ্ধে ‘একাত্তরের পরাজিত শক্তির কাছ থেকে টাকা খাওয়া’র অভিযোগে বক্তব্য দিতে শুরু করে সরকারি দল আওয়ামী লীগ।
দূতাবাস হয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে দুররানির বক্তব্য
রোববার দি নিউজ-এর খবরে বলা হয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৯ মার্চ দুররানির বক্তব্যের একটি অনুলিপি ইসলামাবাদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে পাঠায় পাকিস্তান সরকার। সেখান থেকে পরে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পৌঁছে দলিলটি।
দি নিউজ’কে দেয়া এক মন্তব্যে বাংলাদেশের প্রখ্যাত রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাদেক খান বলেন, ‘‘সত্যিকারের এফিডেভিটটি দেখার পর আওয়ামী লীগের শীর্ষ ব্যক্তিরা ইসুটিকে ধামাচাপা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে মনে হচ্ছে।’’
এর আগে বাংলাদেশে এমন খবর ও রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়া শুরু হলে পাকিস্তান সরকার আইএসআই’র সাবেক প্রধানের এফিডেভিটে ‘অন্য কোনো দেশে’র প্রসঙ্গ থাকার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নাকচ করে দেয়। আসাদ দুররানিও বিবিসি’র সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেন যে তার বক্তব্যে বিএনপি অথবা অন্য কোনো বিদেশী সংস্থা বা ব্যক্তির প্রসঙ্গ নেই। এটা পুরোপুরি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ের মামলা।
সর্বশেষ বাংলাদেশ সরকারে আবেদনে ওই বক্তব্যের অনুলিপি পাঠালো পাকিস্তান।
আসাদ দুররানির বক্তব্যে যা আছে
পাকিস্তানের ১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচনে আইএসআই’র তহবিলের অপব্যবহার করে দেশটির কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও নেতাকে তহবিল জোগানোর অভিযোগ প্রসঙ্গে দুররানিকে ডেকে পাঠায় সুপ্রিম কোর্ট। দুররানি ৯১’তে সংস্থাটির প্রধান ছিলেন। লিখিত বক্তব্যে দুররানি দেশটির কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও নেতাকে সংস্থার থেকে তহবিল জোগানোর কথা স্বীকার করেন।
খবরে বলা হয়, দুররানি পাকিস্তানের জাতিগত বালুচ জনগোষ্ঠি ভিত্তিক দল বালুচ ন্যাশনাল পার্টিকে (Baluch National Party) তহবিল দেয়ার কথা স্বীকার করেন। তহবিলপ্রাপ্ত অন্যরা হচ্ছে দেশটির প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগের নওয়াজ শরীফের নেতৃত্বাধীন অংশের এবং কয়েকটি ইসলামপন্থি দলে শীর্ষ নেতারা।
বাংলাদেশের রাজনীতি যেভাবে উত্তপ্ত হলো
দি নিউজের খবরে বলা হয়, ভারতীয় সাংবাদিক ও বাংলাদেশের একটি প্রধান বাংলা দৈনিকের প্রতিনিধি দীপাঞ্জন রায় চৌধুরীকে ভারতের একটি গোয়েন্দা সংস্থা গত ২ মার্চ সংস্থাটির নয়া দিল্লি কার্যালয়ে ডেকে পাঠায়। পরে রায় চৌধুরীর লেখা একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় আরব আমিরাতের দুবাইভিত্তিক পত্রিকা খালিজ টাইমস-এ। পত্রিকাটির মালিক একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তি। একইসঙ্গে বৃটিশ ট্যাবলয়েড ডেইলি মেইল-এর ভারতীয় সংস্করণেও প্রতিবেদনটি করেন রায় চৌধুরী
বাংলাদেশে রায় চৌধুরী যে বাংলা দৈনিকটির প্রতিনিধি, সেই দৈনিক প্রথম আলোতেও প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়।
এরপর থেকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ ব্যক্তিরা বিএনপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে এ প্রতিবেদনটি ব্যবহার করে আসছিলেন।
No comments:
Post a Comment