প্রতিদিন ২৪ ডেস্ক
মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ঘটিত দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের সময় সচেতন হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
মাওলানা আবুল কালাম আজাদ মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দেয়ার বিষয়ে শুনানির সময় এ নির্দেশ দেন ২য় ট্রাইব্যুনালের সদস্য বিচারক মো. শাহিনুর ইসলাম।
সোমবার সকাল ১০টা পঞ্চাশ মিনিটে শুনানি শুরু হলে প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী দুপুর ২টা পর্যন্ত সময় প্রার্থনা করলে বিচারক বলেন, “ঠিক দুইটায়। দুইটা এক অথবা পাঁচ মিনিটে নয়।”
শুনানির পর প্রসিকিউর সৈয়দ হায়দার আলী বলেন, “আমি সময়ের আবেদন করেছি।” অন্যদিকে তদন্ত কর্মকর্তা নুর হোসেন বলেন, “আমরা তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রসিকিউশনের কাছে জমা দিয়েছি। তারা প্রস্তুতি নিতে পারেনি। তাই দুইটায় শুনানি করবেন আদালত।”
তদন্ত সংস্থা গত ২৫ মার্চ মাওলানা আবুল কালাম আযাদকে গ্রেফতারের আবেদন করলে বিষয়টি প্রসিকিউশন আদালতের নজরে আনেন। তখন ট্রাইবব্যুনাল তার অপরাধ তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন ২ এপ্রিল দাখিলের নির্দেশ দেন।
গ্রেফতারের আবেদনে বলা হয়, আসামি আবুল কালাম আযাদ যে কোনোভাবেই তদন্ত কাজে বাধা সৃষ্টি করতে পারেন, তাই তদন্ত কার্যক্রম নির্বিঘ্নে চালানোর জন্যই তাকে গ্রেফতার আবেদন করা হয়েছে।
২৫ মার্চ মাওলানা আবুল কালাম আজাদকে গ্রেফতারের আবেদনের মধ্য দিয়ে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালে।
সোমবার ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এ টিএম ফজলে কবিরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালেল অপর দুই সদস্য হচ্ছেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারক মো. শাহিনুর ইসলাম।
গত ২২ মার্চ এই দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়।
রোববার নতুন এই ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমের শুরুতেই প্রসিকিউটর এম হায়দার আলী এই ট্রাইব্যুনালের সাফল্য কামনা করে বলেন, “ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানসহ অপর দুই সদস্য তাদের অভিজ্ঞতা, প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতা দিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হবেন।”
এরপর ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবির ট্রাইব্যুনালের সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, “সীমাবদ্ধতা ও সমস্যার মধ্য দিয়ে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হলেও তা নিরসন হবে বলে আমরা আশাবাদী।”
তদন্তকারী সংস্থার পক্ষে প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী বলেন, এক সময়কার ইসলামী ছাত্র সংঘ ও জামায়াত নেতা আবুল কালাম আজাদ মানবতা বিরোধী অপরাধ তদন্তের স্বার্থে গ্রেফতারের আবেদন পেশ করেন। এই আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ফরিদপুর জেলার সালথা থানার বড়খারদিয়া গ্রামের রাজাকার মুক্তিযুদ্ধকালীন ফরিদপুর জেলা শহরসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় পাক বাহিনীর সহযোগী হয়ে মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধ করেছেন।
তদন্তকারী সংস্থা ইতিমধ্যে তার অপরাধের বিষয়ে তথ্য উপাত্তসহ বিভিন্ন উপাদান পেয়েছে। তার বিষয়ে বর্তমানে সাক্ষ্য সংগ্রহ চলছে। এই অবস্থায় তদন্ত কার্যক্রমে সুনির্দিষ্ট বিষয় উল্লেখ করে তদন্তের স্বার্থে তাকে আটক করার পক্ষে প্রসিকিউশন যুক্তি উপস্থাপন করে।
আবেদনে আরো বলা হয়, তিনি মাদ্রাসার ছাত্র হওয়ায় ভালো উর্দু জানতেন। ফলে ফরিদপুরে পাক বাহিনীর তিনি প্রিয়ভাজন হন। তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন ফরিদপুরে আল-বদর বাহিনীর দায়িত্বে ছিলেন।
প্রসিকিউটর হায়দার আলী বলেন, “ফরিদপুর শহর, বোয়ালমারি, নগরকান্দাসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালাতেন বাচ্চু রাজাকার। মুক্তিকামী মানুষ, আওয়ামী নেতাকর্মী ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ ধরে এনে গুলি করতেন। ১৯৭১ সালের ২১ এপ্রিল তিনি ফরিদপুর পুলিশলাইনে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করেন। ফরিদপুর জসীম উদ্দিন রোডে রাজাকার ক্যাম্প ও নির্যাতন সেল স্থাপন করেন।’
ওই সময়ে পাক মেজর আকরাম কুরেশীকে তিনি সার্বক্ষণিক সহায়তা দিতেন। ওই সময় ফরিদপুর স্টেডিয়ামে নিরীহ লোকজনদের ধরে এনে মাটি চাপা দেয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে বাচ্চু রাজাকারের বিরোদ্ধে। এ ছাড়াও তিনি ফরিদপুর শহরের হীরা লাল মোক্তারের বাড়ি দখল করে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন। যোগেশ্বর সাহাসহ নয়জনকে হত্যার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তার বিরুদ্ধে রয়েছে।”
আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার ১৯৭১ সালে নিজেই গুলি করে অসংখ্য মানুষ হত্যা করেছেন বলে রোববার শুনানিতে উল্লেখ করেছেন প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী।
শুনানিতে প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী বলেন, “ফরিদপুর শহরে ১২০০ বধ্যভূমিতে যে হাজার হাজার মানুষ শায়িত আছেন, তাদের হত্যার নির্দেশদাতা এবং নিজেও সরাসরি হত্যাকারী আবুল কালাম আজাদ। তিনি নিজে গুলি করে অসংখ্য মানুষ হত্যা করেছেন। হত্যা করে ফরিদপুর স্টেডিয়ামে মাটিচাপা দিয়েছেন, নদীতে ফেলে দিয়েছেন, শহরের বিভিন্ন স্থানে মাটিচাপা দিয়েছেন। তিনি বিভিন্ন স্থান থেকে নিজে লোকজনকে ধরে আনতেন আবার অন্যদের দিয়েও ধরিয়ে আনতেন।”
প্রসিকিউটর আবেদনে আরো বলেন, “পাক বাহিনীর সহযোগী হিসেবে ফরিদপুর জেলার সেনানিয়া, সরূপদিয় ও বড়দিয়া গ্রামে হত্যা, ধর্ষণ, লুট, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন মাসবতা বিরোধী অপরাধের সঙ্গে বাচ্চু রাজাকার জড়িত রয়েছে।”
ওইদিন শুনানিতে ট্রাইব্যুনাল বলেন, “আবুল কালাকে গ্রেফতারের বিষেয়ে বিবেচনা করা হবে।”
No comments:
Post a Comment