প্রতিদিন ২৪ ডেস্ক
প্রধান বিরোধী দল বিএনপি মনে করে, বঙ্গোপসাগরের অধিকার নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে মামলায় সমুদ্র আইন বিষয়ক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ সরকার ‘ঠকে এসেছে’।
আর এ বিষয়টি আড়াল করতেই ক্ষমতাসীনরা উৎসব করছে মন্তব্য করে আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায় জনম্মুখে প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
শনিবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “সমুদ্র বিজয় নিয়ে সরকার উৎসব করছে। অন্যদিকে মিয়ানমারেও বিজয় উৎসব চলছে। বঙ্গোপসাগরে সীমানার দাবিতে বাংলাদেশের অর্জনের চেয়ে বিসর্জন বেশি হয়েছে।”
“আমি মনে করি, সমঝোতা করতে গিয়ে বাংলাদেশ ঠকে এসেছে। সেজন্য সরকার জনগণকে বিভ্রান্ত করতে এখন সমুদ্র বিজয় উৎসব করছে।”
অবশ্য গত ১৪ মার্চ জার্মানির হামবুর্গে ওই রায়ের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অভিনন্দন জানিয়ে বিএনপি বলেছিল, সমুদ্র বিজয়ের এই কৃতিত্ব মন্ত্রণালয়ের, সরকারের নয়।
সমুদ্র আইন বিষয়ক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার পরপরই পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বলেন, “এটা আমাদের বিরাট বিজয়। আমরা যা যা চেয়েছি, তা সবই পেয়েছি।
এই মামলায় বঙ্গোপসাগরে এক লাখ সাত হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা চেয়ে বাংলাদেশ এক লাখ ১১ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা পেয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তবে ওই রায়ের উল্লেখ করে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত আলোচনা সভায় খন্দকার মোশাররফ বলেন, “বিচারক তার রায়ে বলেছেন, উভয় দেশই কিছু লস কিছু গেইন করেছে। এ কথা থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশ কী পেয়েছে, কী হারিয়ে এসেছে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্বের সাবেক এই শিক্ষক বলেন, “ইন্টারনেটের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের তথ্য থেকে আমি জেনেছি, মামলায় আমরা বঙ্গোপসাগরের যে দাবি করেছিলাম, তা অর্জিত হয়নি। আমরা অনেক কিছু হারিয়ে এসেছি। পূর্বাঞ্চলীয় ৩/৪ ব্লকের বিষয়ে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব থাকবে না।”
মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমার বিষয়টি সুরাহা করতে ২০০১ সালে বিএনপিই জাতিসংঘে দাবি উপস্থাপন করেছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, তখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আলাদা ডেস্ক গঠন করা হয়েছিলো।
“জাতিসংঘে এ বিষয়টির সুরাহা হলে বঙ্গোপসাগরের মহীসোপানে বাংলাদেশের্রর্ কতৃত্ব দৃঢ় হতো, কারণ জাতিসংঘের সমুদ্র সীমানা আইনের ৭৬ অনুচ্ছেদে মহিসোপানের একটি দেশের সীমানা কতটুক হবে, তা নির্ধারিত রয়েছে।”
আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে ক্ষমতাসীনরা বিজয় উৎসব করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সাবেক মন্ত্রী মোশাররফ বলেন, “মিয়ানমারের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তিতে আমরা কী পাইনি তা বিশাল পানির অবয়বে খালি চোখে দেখা যাবে না। গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তিতে আমরা যেভাবে ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হয়েছি, ঠিক একই অবস্থা হয়েছে মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র সীমার ক্ষেত্রেও।”
তিনি প্রশ্ন রাখেন- বাংলাদেশেরই যদি বিজয় হয়ে থাকে, তাহলে মিয়ানমার কেন উৎসব করছে।
‘এখানেই’ রহস্য রহস্য লুকিয়ে আছে মন্তব্য করে অবিলম্বে আন্তর্জাতিক আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান এই বিএনপি নেতা।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল আয়োজিত এই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভানেত্রী নূরী আরা সাফা। অন্যদের মধ্যে বিএনপির সহসভাপতি সেলিমা রহমান, বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা বক্তব্য রাখেন।
No comments:
Post a Comment