বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত
মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনের অর্থ
কেলেঙ্কারির ঘটনা ধামাচাপা দিতেই ইলিয়াস আলীকে গুম করা হয়েছে। দুপুরে নয়াপল্টনে
দলীয় কার্যালয়ে
সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ অভিযোগ করেন তিনি।
শনিবার
জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক প্রতিবাদ সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির কেন্দ্রীয়
সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীকে ‘অপহরণের’ প্রতিবাদ এবং সাবেক এমপি নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ
পিন্টুর নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে এ সভার আয়োজন করে বিএনপি। এতে সভাপতিত্ব করেন
বিএনপির হাজারীবাগ থানার আহবায়ক রমজান আলী হিরু।
মির্জা আলমগীর বলেন, “অত্যাচার, নির্যাতন, গুম, হত্যা করে কখনো ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় না।
জনগণের ভালোবাসা নিয়েই ক্ষমতায় থাকতে হয়। আওয়ামী লীগ তাদের অপকর্মের কারণে সেটি
হারিয়েছে।”
তিনি বলেন, “যারা সরকারের সমালোচনা করছে তাদেরকে গুম, হত্যা ও
নির্যাতন করা হচ্ছে।”
“মিছিল-মিটিং আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। গত
পরশু আমাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও মিছিলে পুলিশ আক্রমণ করেছে। আমাদের
মিছিল-মিটিংয়ের অনুমতি দেয়া হয় না”- অভিযোগ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব।
তিনি বলেন, “সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ঘুষের টাকাসহ এপিএস
হাতেনাতে ধরা পড়েছে। আবার তাকে মন্ত্রীত্বে বহাল রেখেছেন।”
দলের নেতাকর্মীদের প্রতি কঠোর আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়ার আহবান জানিয়ে তিনি
বলেন, “শুধু মিছিল আর স্লোগান দিলে হবে না। আমাদের
দাবি দাওয়া আদায়ে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বাধ্য করতে হবে।”
তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের লোকেরাই বিডিআর বিদ্রোহ ঘটিয়েছে।
বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার জন্য তারা এটি করেছে। পরে ওই ঘটনায়
নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ পিন্টুকে অভিযুক্ত করে মামলা দিয়েছে।”
“পিন্টুকে কারাগার থেকে মুক্ত করে আনতে হলে
রাজপথ দখল করে আন্দোলন করতে হবে। রাজপথ যেন আপনাদের (কর্মীদের) দখলে থাকে সেভাবে
আন্দোলনে অংশ নিতে হবে” –উল্লেখ করেন মির্জা আলমগীর।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, “আমরা এমন দেশে বাস করছি যে দেশে জীবনের
নিরাপত্তা নেই। এ পর্যন্ত ৯৭ জন রাজনৈতিক কর্মী গুম হয়েছে, তার কোনো
খবর নাই।”
তিনি বলেন, “রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো কোনো শক্তি এই কাজগুলো
করছে।”
মির্জা আলমগীর বলেন, শুধু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করলেই সেটি
গণতান্ত্রিক সরকার হয় না। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণসহ সার্বিক পরিস্থিতির মাধ্যমে সেটি
প্রমাণিত হয় সরকার কি গণতান্ত্রিক নাকি অগণতান্ত্রিক।
তিনি বলেন, “একটি নির্বাচিত সরকারও ভয়ঙ্করভাবে জনবিরোধী হতে
পারে সেটি আওয়ামী লীগ দেখিয়েছে”
“সরকার নির্বাচনী ইশতেহারে যা যা বলেছে, গত তিন
বছরে সেগুলোর ঠিক উল্টোটা করেছে।” বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যুব গণসংবর্ধনা দেয়ার সমালোচনা করেন বিএনপি
মহাসচিব। তিনি বলেন, “জীবনের নিরাপত্তাসহ মৌলিক সমস্যাগুলো সরকার
সমাধান করতে পারছে না এজন্য জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরাতে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে
নির্মিত স্টেডিয়ামে সংবর্ধনার নামে নাচ-গানের অনুষ্ঠান করছে।’’
তিনি আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে বলেন, “যতো খুনি, সন্ত্রাসী সব ওই দলে (আওয়ামী লীগে) আশ্রয়
নিয়েছে। আর তাদের আগলে রেখেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে
ফাঁসির আদেশসহ অনেক বড় বড় অপরাধ রাজনৈতিক মামলা বলে রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে মাপ করে
দিয়েছে।”
“যখন কোনো ঘটনা ঘটে এবং প্রধানমন্ত্রীর দলের লোকেরা
তাতে জড়িত থাকে তখন উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপান তিনি” –যোগ করেন
মির্জা আলমগীর।
তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী সত্যিকারার্থেই জনগণের জন্য
ভয়ঙ্কর হয়ে দাড়িয়েছে। আওয়ামী লীগ আগের মতো একই কায়দায় একদলীয় শাসন কায়েম করতে
চাচ্ছে। এজন্য বিরোধীদলের নেতাদের হত্যা-গুম করার প্রকল্প হাতে নিয়েছে তারা।”
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, “প্রতিবাদ
নয়, আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের সব অপকর্মের
বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন দিতে সরকারের
প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
No comments:
Post a Comment