প্রতিদিন ২৪ ডেস্ক
কেন্দ্রের অনুমোদিত আহবায়ক কমিটির সাংবাদিক সম্মেলনকে কেন্দ্র করে
যুক্তরাজ্য বিএনপি’র বিবদমান
দুগ্রুপের সংঘর্ষে মঙ্গলবার লন্ডনে দুইজন আহত হয়েছেন। এসময় নবগঠিত আহবায়ক কমিটি
বিরোধীরা দীর্ঘক্ষণ অবরুদ্ধ করে রাখে তারেক রহমানের আশির্বাদপুষ্ট হিসেবে পরিচিত
নেতা নবগঠিত কমিটির
আহবায়ক এমএ মালেককে। মালেক ও তার অনুসারীদের সাথে কয়েকজন সাংবাদিকও এসময় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন প্রেস কনফারেন্সস্থলে। শেষ পর্যন্ত পুলিশ এসে বিক্ষুব্ধ বিরোধী পক্ষকে সরিয়ে দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয় এবং অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসেন কোন কোন সাংবাদিক। নবগঠিত কমিটি সদস্যদের নাম ঘোষণা করার জন্যে মঙ্গলবার বেলা ২টায় পূর্ব লন্ডনের একটি রেস্টুরেন্টে কমিটি আহবায়ক এমএ মালেক এক সাংবাদিক সম্মেলন আহবান করলে বিরোধী গ্রুপের মধ্যে এই উত্তেজনা দেখা দেয়।
বিরোধীরা পাল্টা সভা আহবান করে সাংবাদিক সম্মেলন স্থলের উল্টো দিকের একটি হলে। নবগঠিত আহবায়ক কমিটি বিরোধী বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ওই হলে সমবেত হতে থাকার এক পরযায়ে এমএ মালেকের নেতৃত্বাধীন আহবায়ক কমিটির সদস্য রহিম উদ্দিনের সাথে তর্কবিতর্ক শুরু হয় বিরোধী পক্ষের কয়েকজন কর্মীর। এই তর্কবিতর্ক এক পরযায়ে হাতাহাতি ও সংঘর্ষে গড়ালে আহত হন রহিম উদ্দিন।
আহত রহিম উদ্দিনকে তার গ্রুপের কয়েকজন কর্মী সাংবাদিক সম্মেলনস্থলের ঘরের ভেতর নিয়ে আসলে বিরোধী পক্ষের বিক্ষুব্ধ কর্মীরা সাংবাদিক সম্মেলন স্থলের ঘরে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করে। উপায়ান্তর না দেখে মালেক পক্ষের কর্মীরা ঘরের দরজা তালাবদ্ধ করে ফেললেও বিরোধীরা দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকার চেষ্টা করতে থাকে।
এসময় ঘরের ভেতর নবগঠিত কমিটির আহবায়কসহ তার সমর্থকরা এবং কয়েকজন সাংবাদিক অবস্থান করছিলেন। শেষ পরযন্ত ঘরের ভেতর থেকে পুলিশে ফোন করে সাহায্য চাওয়া হলে পুলিশ এসে অবরুদ্ধদের উদ্ধার করে। অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে উদ্ধার পেলেও বিচ্ছিন্ন ভাবে হামলার ঘটনা ঘটতে থাকে অনেক্ষণ। পুলিশী হস্তক্ষেপে তাৎক্ষনিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসলেও পূর্ব লন্ডনের বাংলাটাউনে এ রিপোর্ট লেখা পরযন্ত উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিবদমান পরষ্পর দু’গ্রুপ দেখা মাত্রই একে অন্যের উপর আক্রমন করছেন।
সংঘর্ষে একটি ঘরের দরজা জানালা ভাঙ্গচুর করা হয়। পুলিশ সাংবাদিক সম্মেলন স্থলের সিসি ক্যামেরার ক্যাসেট খুলে নিয়ে পরীক্ষা করছে হামলার সাথে কারা জড়িত তার নিশ্চিত হতে। সংঘর্ষে রহিম উদ্দিন ছাড়াও রফিক উল্লা নামের আরেকজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করলেও পরে ছেড়ে দিয়েছে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের এপ্রিলে যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সভাপতি কমর উদ্দিনের মৃত্যুর পর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে এতদিন দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন সিনিয়র সহসভাপতি মিয়া মনিরুল আলম। ভালই চলছিল দেশের বাইরে সক্রিয় প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র সবচেয়ে বড় এই শাখা সংগঠনটি।
কিন্তু সম্প্রতি সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ মালেককে আহবায়ক ঘোষণা করে নতুন কমিটি ঘোষণা করলে বাধে বিপত্তি। যুক্তরাজ্য বিএনপিতে সবচেয়ে সক্রিয় তরুণ অংশটি প্রত্যাখ্যান করে এই কমিটি। অভিযোগ উঠে দলের প্রাণপুরুষ তারেক রহমানের নাম ব্যবহার করে দীর্ঘদিন যাবত ফায়দা হাসিলকারী মালেক নিজ এলাকার কতিপয় ব্যক্তির সমন্বয়ে নিজেকে নেতা ঘোষণা করে এই আহবায়ক কমিটি গঠন করেছেন। তারেক রহমানের সাথে তার গভীর সম্পর্কের দোহাই দিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের বিভ্রান্ত করে এই আহবায়ক কমিটি করা হয়েছে- এমনই অভিযোগ অনেক নেতাকর্মীর।
এদিকে, মঙ্গলবারের প্রেস কনফারেন্সে বিরোধী পক্ষের হামলার অভিযোগ করে নবগঠিত কমিটির আহবায়ক এম এ মালেক সাংবাদিকদের বলেন, সোমবার রাতে বিএনপি চেয়ারপার্সনের ব্যক্তিগত সহকারী মুসফিকুল ফজল আনসারী ও যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সাবেক সভাপতি মহিদুর রহমানের মাধ্যমে একটি সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিয়া মনিরুল আলমের নেতৃত্বাধীন বিরোধী পক্ষের ৬/৭ জন নেতা অংশ নেন।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় আজকের সাংবাদিক সম্মেলনে মিয়া মনির গ্রুপও যোগদান করবে। এম এ মালেক সাংবাদিকদের বলেন সমঝোতার পরও আজ কেন মিয়া মনির গ্রুপ প্রেস কনফারেন্সে হামলা করলো তা আমার বোধগম্য নয়। তিনি অভিযোগ করে বলেন, তাঁকে জানে মেরে ফেলার জন্যে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে।
অপরদিকে, নবগঠিত কমিটির বিরোধী পক্ষের একজন নেতা বাংলানিউজকে বলেন, সোমবার রাতের সমঝোতা বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল আজকে মালেক গ্রুপ কোনো প্রেস কনফারেন্স করবে না। কিন্তু তাঁরা সমঝোতার শর্ত ভেঙ্গে প্রেস কনফারেন্স করছে খবর পেয়ে যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতাকর্মীরা দলে দলে এসে উপস্থিত হয় প্রেস কনফারেন্স হলের বাইরে। এক পরযায়ে মালেকের ম্যাসলম্যান হিসেবে পরিচিত রহিম উদ্দিন হলের বাইরের কর্মীদের সাথে তর্কাতর্কি শুরু করলে বিক্ষুব্ধ কর্মীরা তাঁর উপর আক্রমন করে।
No comments:
Post a Comment