Wednesday, April 18, 2012

ইটিভির রিপোর্টে দেখানো হলো মাওলানা সাঈদী ১৯৭৩ সালে ঢাকায় ওয়াজ মাহফিল করেছেন


প্রতিদিন ২৪ ডেস্ক
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন সাক্ষ্য দেয়ার সময় ইটিভির আধা ঘণ্টাব্যাপী একটি প্রতিবেদন দেখানো হয় গতকাল। একুশের চোখনামে ওই সচিত্র প্রতিবেদনে মাওলানা সাঈদীর সংক্ষিপ্ত জীবনীর বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়, তিনি ১৯৭৩ সালে ঢাকার আরমানিটোলায় প্রথম ওয়াজ মাহফিল করেন। 

তবে ইটিভির একই রিপোর্টের একপর্যায়ে হুমায়ূন আহমেদের ভগ্নিপতি আলী হায়দার খান বলেছেন, মাওলানা সাঈদী স্বাধীনতার পর সাড়ে তিন বছর পলাতক ছিলেন। 
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে যে চার্জশিট জমা দেয়া হয়েছে তাতে উল্লেখ আছে স্বাধীনতার পর সাঈদী আত্মগোপনে চলে যান অস্ত্রসহ। দীর্ঘ দিন যশোরে পালিয়ে থাকেন। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে শহীদ হওয়ার পর সাঈদী আত্মগোপন অবস্থা থেকে বের হন এবং ১৯৮৬ সালে ভুয়া মাওলানা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। 
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত যেসব সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন তাদেরও অনেকে বলেছেন স্বাধীনতার পর দীর্ঘ দিন তিনি পলাতক ছিলেন। ইটিভির রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী ১৯৭৩ সালে ঢাকায় ওয়াজ মাহফিল করার কথা যদি সত্য হয় তাহলে তা স্বাধীনতার মাত্র এক থেকে দেড় বছরের মাথায় হয়েছে। তাদেরই রিপোর্টে আলী হায়দার খানের বর্ণনামতে সাড়ে তিন বছর পালিয়ে থাকার তথ্যের সাথে যেমন গরমিল রয়েছে তেমনি গরমিল রয়েছে চার্জশিটে বর্ণিত তথ্য এবং অন্য যেসব সাক্ষী বলেছেন স্বাধীনতার পর মাওলানা সাঈদী দীর্ঘ দিন পালিয়ে ছিলেন সে বক্তব্যেরও। 
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় সাক্ষী রুহুল আমিন নবীন গত ৮ ডিসেম্বর সাক্ষ্য দেন। তখন তিনি বলেন, ১৯৮৬ সালে পাড়েরহাট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে সাঈদী সাহেব একটি মাহফিল বা জনসভা করার প্রস্তুতি নেন তাদের কর্মী বাহিনীর মাধ্যমে। আমরা বাধা দেবো চিন্তা করে স্থানীয় জামায়াত নেতা মোকাররম হোসেন বারীসহ আরো তিনজন জামায়াত কর্মী আমার বাসায় আসেন এবং আমাকে বলেন, সাঈদী সাহেব কাল পাড়েরহাট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে মাহফিলে বক্তব্য দেবেন। আমি তাদের বলি, মাহফিলে কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য দিলে মাহফিল করতে দেয়া হবে না। 
ইটিভির ওই রিপোর্টে উপস্থাপিত বিভিন্ন তথ্যের সাথে ইতঃপূর্বে সাক্ষীদের বর্ণিত অনেক তথ্যের সাথে আরো অনেক গরমিল ধরা পড়ে। যেমন ইটিভির রিপোর্টে মানিক পসারী নামে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে এক সাক্ষীর দীর্ঘ সাক্ষাৎকার রয়েছে। সাক্ষাৎকারে মানিক পসারী নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করেন এবং ইটিভি রিপোর্টারও তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অভিহিত করেন। 
কিন্তু গত বছর ২৮ ডিসেম্বর মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ষষ্ঠ সাক্ষী মানিক পসারী আদালতের জেরার সময় স্বীকার করেন তিনি মুক্তিযোদ্ধা নন। ২০১০ সালে পিরোজপুরের বর্তমান এমপি এ কে এম এ আউয়াল তাকে মুক্তিযোদ্ধা আখ্যায়িত করে ডিও লেটার দিয়েছেন বলে জানান। 
২৮ ডিসেম্বর মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম জেরার সময় সাক্ষী মানিক পসারীকে প্রশ্ন করেনÑ
আইনজীবী : আপনি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন?
সাক্ষী : করি নাই। (এরপর বলেন) বাড়িতে বসে করেছি।
আইনজীবী : আপনি মুক্তিযুদ্ধ করেছেনÑ এ মর্মে এমপি আপনাকে ডিও লেটার দিয়েছেন আপনার তদ্বিরের কারণে।
সাক্ষী : আমি মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেছি। তাদের খাওয়াছি দাওয়াছি। সে জন্য দেছে। 
পিরোজপুরে মামলা করার পর মানিক পসারী দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দেন ইটিভিতে এবং গতকালের রিপোর্টে তা আদালতে দেখানো হয়। গত ২৮ ডিসেম্বর জেরার সময় মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম তাকে প্রশ্ন করেছিলেনÑ
আইনজীবী : পিরোজপুর মামলার পর আপনি ইটিভিতে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন?
সাক্ষী : স্মরণ নেই। কত লোক যায়। 
মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম গতকাল বলেন, মানিক পসারী ইটিভির সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তাদের বাড়ি পোড়ার কোনো চিহ্ন নেই। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা পোড়া টিন আদালতে হাজির করেছেন আলামত হিসেবে। 
মাহবুবুল আলম হাওলাদার ও মানিক পসারী ২০০৯ সালে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে পিরোজপুর আদালতে মামলা করার পর ইটিভির ওই রিপোর্ট প্রস্তুত করা হয়।
আদালতে প্রদর্শিত ইটিভির রিপোর্টকে উদ্দেশ্যমূলক বলে আখ্যায়িত করেছেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী। তিনি অভিযোগ করেছেন, সাক্ষ্য দিতে আসেননি এমন অনেক লোকের সাক্ষাৎকার রয়েছে এখানে। তার মতে, এ রিপোর্ট আসামিকে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টার অংশ । 
তদন্ত কর্মকর্তার জবানবন্দী : গতকাল সপ্তম দিনের মতো মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে জবানবন্দী দেন তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন। এখানে সপ্তম দিনের জবানবন্দী তুলে ধরা হলো :
গোপান ও প্রকাশ্যে তদন্তে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয় যে, আসামি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ওরফে দেলু ওরফে দেইল্লা, পিতা মৃত ইউসুফ শিকদার, গ্রাম সাউথখালী, ইন্দুরকানী ১ মে ১৯৪০ (দাখিল সনদ অনুযায়ী) জন্মগ্রহণ করেন। 
তিনি ১৯৫৭ সালে ছারছিনা দারুসসুন্নত আলীয়া মাদরাসা থেকে দাখিল প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন। ওই সময় আলিম শ্রেণী চার বছরের ছিল এবং সে কারণে দাখিলের মান ছিল অষ্টম শ্রেণীর সমমানের। দাখিল পাস করার পর তিনি একই মাদরাসায় আলিমে ভর্তি হয়ে অধ্যয়ন করতে থাকেন। কিছু দিনের মধ্যে মাদরাসা কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ আসে, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী জামায়াতের ছাত্র রাজনীতির সাথে সরাসরি জড়িত। বিষয়টি তদন্তের পর সত্য প্রমাণিত হলে মাদরাসা থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। পরে তিনি বারইপাড়া সিদ্দিকীয়া সিনিয়র মাদরাাসা থেকে ১৯৬০ সালে আলিম পরীক্ষায় তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি আর কোথাও থেকে কোনো প্রকার ডিগ্রি লাভ করেননি বলে জানা যায়। 
দেলাওয়ার হোসাইন সাইদীর নামের সাথে আল্লামা ও মাওলানা লেখার মতো শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনো প্রমাণ তদন্তকালে পাওয়া যায়নি। তদন্তকালে প্রাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণে জানা যায়, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পূর্ব থেকে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ওরফে দেলু ওরফে দেইল্লা পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানী থানাধীন পারেরহাট বন্দরের পাশে তার শ্বশুরবাড়িতে ঘরজামাই হিসেবে অবস্থান করেন। 
পারেরহাট বাজারের রাস্তার ওপর বসে লবণ মরিচ, তেল ও অন্যান্য সামগ্রীর ব্যবসা করতেন তিনি। দেলাওয়ার হোসাইনের নেতৃত্বে শান্তি কমিটি ও সশস্ত্র রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিজেরা এককভাবে আবার কখনো পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সহায়তায় পিরোজপুর এলাকায় নিরীহ নিরস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, হিন্দু সম্প্রদায়সহ সাধারণ জনগণের ওপর গণহত্যা, হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠন চালাতে থাকে। পাক দখলদার বাহিনী ও তাদের সহযোগী শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর , আলশামস বাহিনী পিরোজপুরে অন্তত ৩০ হাজার দেশপ্রেমিককে হত্যা ও কয়েকশত মহিলাকে ধর্ষণ করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় পিরোজপুরের বিভিন্ন নদীতে শত শত মৃতদেহ ভাসতে দেখা গেছে। পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগী বাহিনী তথা শান্তি কমিটি, রাজাকার আলবদর, আলশামস বাহিনী তাদের হত্যা করে নদীতে ফেলে দিয়েছিল। তাদের অত্যাচার নির্যাতনে পিরোজপুরের হাজার হাজার মানুষ জীবন বাঁচানোর জন্য পাশের দেশ ভারতে শরণার্থীশিবিরে আশ্রয় নেন। জামায়াতে ইসলামীর আমির অধ্যাপক গোলাম আযম, মন্ত্রী এ কে এম ইউসুফ, পিরোজপুর শান্তি কমিটির প্রেসিডেন্ট খান বাহাদুর সৈয়দ মো: আফজালদের পরিকল্পনা ও নির্দেশ মোতাবেক জামায়াতে ইসলামীর নেতা সেকেন্দার শিকদার, দানেশ মোল্লা, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ওরফে দেলু ওরফে দেইল্লা এবং আরো অনেককে নিয়ে পারেরহাট শান্তি কমিটি গঠন করা হয়। শান্তি কমিটির সদস্যরা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ওরফে দেলু ওরফে দেইল্লাসহ বিভিন্ন মাদরাসার ছাত্র, স্থানীয় জামায়াতের ও স্বাধীনতাবিরোধী অন্যান্য সংগঠনের সমন্বয়ে পারেরহাটে ১৯৭১ সালের মে মাসের শুরুতে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সহযোগী (অক্সিলিয়ারি ফোর্স) রাজাকার বাহিনী গঠন করে। রাজাকাররা পারেরহাটে ফকির দাসের বিল্ডিং দখল করে সেখানে রাজাকার ক্যাম্প স্থাপন করে। 
৩ মে ১৯৭১ তারিখে বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো পিরোজপুরেও স্বাধীনতাকামী মানুষকে দাবিয়ে রাখার লক্ষ্যে কর্নেল আতিক, মেজর নাদের পারভেজ, ক্যাপ্টেন এজাজ ও অন্যান্য সেনাসদস্যসহ পিরোজপুর জেলার দায়িত্ব গ্রহণ করে। তারা পিরোজপুর উচ্চবিদ্যালয়ে ক্যাম্প স্থাপন করে। পাকিস্তান হানাদার বাহিনী পিরোজপুর আসার পর শান্তি কমিটির লোকদের সাথে বৈঠক করে। তারা শান্তি কমিটিসহ রাজাকার, আলবদর, আলশামস পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর পক্ষ অবলম্বন করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি, তাদের পরিবারবর্গ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনসহ সাধারণ মানুষের ওপর গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগসহ অন্যান্য অপরাধ করতে শুরু করে। পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে সাথে নিয়ে তারা পিরোজপুর শহরসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১৯৭৩ এর ৩ (২) এবং ৪ (১) ধারার অপরাধ করতে থাকে। মামলার তদন্তে সাক্ষ্য প্রমাণাদিতে আসামি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ওরফে দেলু ওরফে দেইল্লা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষার নামে পাকিস্তান দখলদার সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য শান্তি কমিটিতে যোগদান করেন এবং জামায়াতে ইসলামীর পরিকল্পনা মোতাবেক পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগী বাহিনী (অক্সিলিয়ারি ফোর্স) রাজাকার বাহিনীতে যোগদান করে।
সাঈদীর বিরুদ্ধে ২৩ দফা অভিযোগ উত্থাপন : তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন এরপর মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১৯৭৩ এর ৩(২) এবং ৪(১) ধারায় ২৩ দফা অভিযোগ উত্থাপন করেন। এ সময় তিনি হত্যা, ধর্ষণ অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের অভিযোগ বর্ণনার সাথে পিরোজপুরের পারেরহাট, উমেদপুর, বাদুরিয়া, চিথলিয়ার বিভিন্ন গ্রাম, মামলায় বর্ণিত ভুক্তভোগী এবং সাক্ষীদের বাড়িঘর ও ঘটনাস্থলের স্থির ও ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করেন আদালতে। 
২৩ দফা অভিযোগ হলো
১৯৭১ সালের ৪ মে পিরোজপুর মাছিমপুর বাসস্ট্যান্ডের পেছনে ২০ জনকে হত্যার অপরাধ। 
৪ মে মাছিমপুর হিন্দুপাড়ায় লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ এবং ১৩ জনকে হত্যা।
৪ মে পিরোজপুর শহরের কয়েকটি হিন্দু পাড়ায় লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে সম্পূর্ণ ধ্বংস।
৪ মে শহরের ধোপবাড়ির সামনে এলজিইডির পেছনে হিন্দু সম্প্রদায়ের ৪ জনকে হত্যা।
৪ মে পিরোজপুর শহর থেকে সাইফ মিজানুর রহমান, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুর রাজ্জাক, এসডিওসহ তিনজন সরকারি কর্মকর্তাকে আটক, অপহরণ ও হত্যা করে বলেশ্বর নদীতে লাশ ফেলে দেয়া। 
৭ মে ইন্দুরকানী থানার পারেরহাট বন্দর বাজারের ৩০-৩৫টি দোকান, বাড়িঘর লুণ্ঠন এবং ২২ সের সোনারুপা লুট ।
৮ মে বাদুরিয়া গ্রামের শহিদুল ইসলাম সেলিম খানের বাড়ি লুট, অগ্নিসংযোগ এবং তার পিতা নুরুল ইসলামকে নির্যাতন। 
৮ মে চিথলিয়া গ্রামের মানিক পসারীর বাড়ি লুট, অগ্নিসংযোগ, সম্পূর্ণ ধ্বংস এবং ইব্রাহিম ওরফে কুট্টি ও মফিজ উদ্দিনকে সেই বাড়ি থেকে অবৈধভাবে আটক করে পারেরহাটের থানারঘাটে ইব্রাহিমকে গুলি করে হত্যা, মফিজকে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতনের অপরাধ। 
২ জুন নলবুনিয়া গ্রামের আব্দুল হালিম বাবুলের বাড়ির মালামাল লুটের পর পুড়িয়ে ধ্বংস। 
২ জুন ইন্দুরকানী থানাধীন উমেদপুর হিন্দুপাড়ায় ২৫টি বাড়ি লুট, অগ্নিসংযোগ করে ধ্বংস এবং বিশাবালীকে আটক করে গুলি করে হত্যা। 
২ জুন একই থানার টেংরাখালি গ্রামের মাহবুবুল আলম হাওলাদারের বাড়ি লুট, এবং তার বড়ভাইকে নির্যাতন। 
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এক দিন পারেরহাটের হিন্দুপাড়া থেকে ১৪ জন হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরস্ত্র মানুষকে অপহরণ করে পাক বাহিনীর হাতে তুলে দেয়া। 
মুক্তিযুদ্ধ শুরুর দুই-তিন মাস পর এক রাতে অনুমান ৩টায় নলবুনিয়ার আজহার আলীকে নির্যাতন ও গুরুতর জখম এবং তার ছেলে সাহেব আলীকে অপহরণ করে পিরোজপুর নিয়ে পাক বাহিনীর সহায়তায় হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়া। 
হোগলাবুনিয়ার হিন্দুপাড়ার শেফালী ঘরামীকে ধর্ষণের অপরাধ।
মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে হোগলাবুনিয়া গ্রামের ১০ জন নিরীহ হিন্দু সম্প্রদায়ের লোককে পাকিস্তান বাহিনীর হাতে তুলে দিয়ে হত্যা। 
পারেরহাট বন্দরের গৌরাঙ্গচন্দ্র সাহার তিন বোনকে অবৈধভাবে আটক ও অপহরণের পর পিরোজপুর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে তুলে দিয়ে ধর্ষণ করানো। 
পারেরহাট বাজারের বিপদ সাহার মেয়ে ভানুসাহাকে আটক করে ধর্ষণ। 
পিরোজপুর সদরের বাগমারা গ্রামের শহীদ ভাগিরথীকে নির্যাতন করে হত্যা । 
পারেরহাট বন্দরের আশপাশের ১০০/১৫০ জন হিন্দুকে মুসলমান ধর্মে ধর্মান্তর। 
নভেম্বর মাসের একদিন ইন্দুরকানীর তালুকদার বাড়ি লুট করার পর ৮৫ জন হিন্দুকে অবৈধভাবে আটক, অপহরণের পর নির্যাতন এবং মহিলাদের ধর্ষণ। 
৫ মে এসডিপিও ফয়জুর রহমান ও অন্যদের অপহরণ ও হত্যার পর বলেশ্বর নদীতে লাশ ফেলে দেয়া। 
মে মাসের ১৭-১৮ তারিখে ইন্দুরকানীর আলহাজ আব্দুল মান্নান তালুকদার পিতা মৃত আব্দুল গনিকে নির্যাতন। 
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পারেরহাট বাজারের মদন সাহার বসতবাড়ি লুট, লুণ্ঠিত মালামাল নিজ মাথায় বহন করে পাস তহবিল অফিসে জমা করার অপরাধ। 
এ পর্যন্ত বলার পর গতকাল মুলতবি করা হয় সাক্ষ্য; আজ আবার শুরু হওয়ার কথা।

No comments:

Post a Comment